১ মিনিট সময় নিয়ে গল্পটি পরুন আশা করি ভালো লাগবে ❤️

 ১ মিনিট সময় নিয়ে গল্পটি পরুন আশা করি ভালো লাগবে ❤️



মজার মজার গল্প পেতে ক্লিক করুন 👇👇




আমার একমাত্র বড় ভাইয়ের স্ত্রী মিতু ভাবীর ব্যবহার ইদানিং অদ্ভুত রকম লাগছে। ভাইয়া ঢাকাতে চাকরি করে। গ্রামের বাড়িতে আমি, মা-বাবা আর ভাবী থাকি। মা-বাবা এক রুমে, আমি পূর্ব দিকের রুমে আর ভাবি থাকেন পশ্চিম দিকের রুমটায়। 

 আমি খেলাধুলার চরম ভক্ত। টিভিটা যেহেতু ভাবীর রুমে তাই স্বাভাবিকভাবে আমাকে খেলা দেখতে গেলে ভাবীর রুমে যেতে হয়। ভাইয়া থাকলে রাতেও খেলা দেখি কিন্তু ভাইয়া ঢাকায় থাকায় এখন রাতের খেলা আর দেখা হয় না শুধুমাত্র দিনের খেলা গুলোই দেখি। 


কয়েকদিন আগে নিউজিল্যান্ডের একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হচ্ছিল। আর তাই আমি ভাবীর রুমে গিয়েছি খেলা দেখতে। আমি ওখানে গিয়ে খেলা দেখতেছিলাম। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম ভাবী কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করছেন। কিন্তু আমি তো এই ম্যাচটা দেখেই চলে যাবো উনার সারাদিনের সিরিয়াল দেখাতে কোনোরকম বিঘ্নতা ঘটাবোনা তার পরেও তিনি কেমন যেন করছিলেন। সাউন্ড ছিল ১২তে। হঠাৎ ভাবী বলে উঠল "এই আকাশ শোনো, ভলিউম এত বাড়িয়ে টিভি দেখো কেন? বলি কী ভলিউম বেশি বাড়াতে হয় না। তাহলে স্পিকারের সমস্যা হয় খুব তাড়াতাড়ি। স্পিকার নষ্ট হয়ে যায়। এটা তো বোঝা উচিত ভাইয়া।"


আমি বললাম, " কিন্তু আমি তো এত ভলিউম দেইনি ভাবী।"


"তাহলে কি আমি ভুল শুনছি? যা দিয়েছো তাও আর দিবানা বুঝেছো তো? 


"জ্বী আচ্ছা আমি বুঝেছি। "


এর আরও কিছুক্ষণ পর তিনি আবার বললেন "আচ্ছা আকাশ তুমি এত নড়াচড়া করে টিভি দেখো কেন? সোফায় বসে এভাবে নড়াচড়া করলে সোফার কভার নষ্ট হয়ে যাবে না? আর সোফায় বসে এভাবে নড়াচড়া করতে হয় না। কিছু মনে করো না, তোমার যদি অসুবিধা হয় তুমি বাবার রুম থেকে প্লাস্টিকের চেয়ারটা নিয়ে এসে আরাম করে দেখো কেমন?"


 না এই কথাটা শুনে আমার খুব কষ্ট লাগলো। আমি সোজা উঠে চলে এসে বাবার রুম থেকে চেয়ারটা নিয়ে কিছুক্ষণ জোর করে টিভি দেখে সরাসরি চলে এসেছি। ভাল্লাগছে না কিছু। কয়েকমাস আগেই তো ভাবী অন্যরকম ছিল। এতো তাড়াতাড়ি এতো ভিন্নরকম হয়ে উঠলো কেন বুঝিনা।


 ভাইয়া আমার জন্য প্রতিমাসে আলাদা করে ৫০০ টাকা ভাবীর কাছে পাঠায়। সে টাকাটা ভাবীর কাছ থেকে নিতে হয় আমাকে গিয়ে।


সেদিন ভাবীর রুমের পাশে গিয়ে ডাকলাম "ভাবী আছেন? "


" হ্যাঁ আসো। "


" ভাইয়া কি টাকা পাঠিয়েছেন আমার জন্য? "


" হ্যাঁ পাঠিয়েছে। দাঁড়াও আমি দিচ্ছি।"

 তিনি টাকাটা নিয়ে এসে আমার হাতে দিলেন আর বললেন " আসলে তোমার ভাইয়া চাচ্ছিল একটা জায়গা কিনতে। আর তুমি তো জানোই ঢাকা শহরে একটা জায়গা কিনলে কত টাকার প্রয়োজন হয়। কোথা হতে যে এত টাকা জোগাড় করবে সেটা ভেবে ভেবেই তোমার ভাইয়া ক্লান্ত। আসলে সবাইকে দিয়ে ওর হাতে টাকা আর থাকে না। সবারই তো উচিত নিজের একটা টাকা আয়ের ব্যবস্থা করা তাই না? বলো? পরের কাছে হাত পেতে টাকা নেয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন ঘেন্না লাগে। ঠিক বলিনি বল? আর হ্যাঁ একটা কথা আমি কিন্তু তোমাকে মীন করে কিছু বলিনি। যারা এমনিতে তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নেয় তাদেরকে বুঝিয়েছি। তুমি কিছু মনে করো না আবার।"


 ইচ্ছে হচ্ছিল টাকাটা রেখেই চলে আসতে কিন্তু পারিনি। পরের কাছে হাত পেতে টাকা নেয়া বলতে কী বুঝিয়েছেন ভাবী? ভাই আমার পর? কথাটা একদম অপ্রাসঙ্গিক। আমার আপন ভাই কিনা আমার পর? কথাগুলো যে তিনি আমাকে বলেছেন সেটা বোঝার আর বাকি রইল না। 

না আর কোনদিন ভাইয়ের কাছ থেকে আমার জন্য এক্সট্রা টাকা চাইবো না। প্রয়োজন হলে টিউশনি করাব হাতখরচের জন্য। মাথাটা ভন ভন করছে। 


আমি আমাদের এলাকার একটা কলেজে পড়ি। আমাদের কলেজ টা আমাদের বাসা থেকে এক কিলোমিটার দূরের পথ। সাধারনত রিক্সা করেই কলেজে যেতাম কিন্তু এখন থেকে ভাবছি হেঁটে যাবো তার পরেও যদি কিছু টাকা সেভ হয়।


রবিবার দিন দুপুরে বটতলার পাশের বড় মাঠে বিরাট একটা ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছে। পুবপাড়ার সাথে আমাদের পাড়ার খেলা। দর্শক জড়ো হয়েছে মাঠের চারপাশে। জুনিয়রদের মধ্যে একমাত্র আমাকে নেয়া হয়েছে খেলাতে। অনেক উত্তেজনা কাজ করছে। এই খেলার হার জিত নিয়ে অনেক কথা হয়। দেখা যাবে হারলে কলেজে পচানো হচ্ছে একে অপরকে। অনেক আগে থেকেই এই প্রতিদ্বন্দ্বীতাটা হয়ে আসছে। মেয়েরাও খেলা দেখতে এসেছে। মহিলারা, মুরব্বিরা একটা সাইডে চেয়ারে বসেছেন। চারপাশে হই হই ব্যাপার। যথারীতি খেলা শুরু হয়েছে। 

প্রায় দু'টার দিকে খেলা শেষ হলো। প্রচন্ড রোদের মধ্যে এত মনোযোগ দিয়ে খেলেও আমরা হারালাম পুবপাড়ার ছেলেদের সাথে। তারা ট্রফি নিয়ে আনন্দ করতে করতে তাদের এলাকায় চলে গেল। আর আমরা মন খারাপ করে যে যার মত বাড়ি ফিরলাম। এ নিয়ে টানা দুইবার হারালাম পুবপাড়ার ছেলেদের সাথে। বাসায় আসলাম বেশ খানিকটা হতাশা নিয়ে। প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে দৌড়ে গেলাম ভাবীর রুমের দিকে। নক করে ভেতরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে পানির বোতলটা নিলাম। 

ভাবী হয়তো বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছিলেন। তিনি উঠে বসে আমায় কড়া ভাবে বললেন "আকাশ এভাবে কেউ ফ্রিজ খুলে? এভাবে কয়েকবার টান দিয়ে ফ্রিজ খুললে তো দুদিনেই নষ্ট হয়ে যাবে এটা। আর একটু পর পর এত ফ্রিজ খোলাখুলি কিসের জন্য সে আমি বুঝিনা। এটা অনেক দামি ফ্রিজ সেটা তুমি জানো। এটা নষ্ট হয়ে গেলে এখানে আশেপাশে ঠিক করানো যাবে না। একটু কেয়ারফুল হতে হয়। এই ব্যাপারগুলোতে বড় হচ্ছো আজও বুঝোনা কেন? "


আমি যেন কাঠ হয়ে গেলাম। খেলা হারার কষ্টটা তুচ্ছ অনুভূত হলো। বুকের ভেতর দিয়ে কথার আঘাত কতটুকু ছেদ করতে পারে এই প্রথম এত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হল। 


ছাদে গিয়ে কেন জানি নিজেকে খুব তুচ্ছ ও ছোট মানুষ মনে হল। ভেজা চোখ মুছে ঠিক করলাম এখন থেকে ভাবীর ফ্রিজের আশেপাশেও আর যাব না। 


এভাবেই দিন যায়। আমি ভাবীর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব। মাঝে একবার ভাইয়া এসেছিলো। ভাইয়া আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল " কিরে তুই টাকা নিস না কেন এখন?"

 আমি বললাম "আমি টিউশন নিয়েছি। হাত খরচ আর দিওনা। অভ্যাস করছি টাকা উপার্জনের। আর যদি লাগে তোমাকে আমি বলব।"


 ভাইয়া তৃপ্ত হলো আর কিছু বলল না। শুধু এটুকুই বলল "আচ্ছা লাগলে আমায় বলিস। "


পরের বছরের শুরুটা বেশ আনন্দময় ছিল আমার জন্য। ঘরে নতুন অতিথি আসতে চলেছে। আমি কাকা হতে চলেছি। আর ভাইয়া বাবা হতে চলেছে। 

আজ তিন দিন হল গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। যদিও সন্ধ্যা থেকে আকাশের বিদ্যুৎ অবিরতভাবে চমকাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির জন্য এশারের আজান টাও ঠিকমতো শোনা গেল না। বাবা আর আমি বারান্দায় বসে আছি। বৃষ্টির সময় বারান্দাতে বসে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে। অবশ্য মানুষের অনেক গুলা ভালোলাগা থাকে কারণ ছাড়া ঠিক সেগুলার একটা হচ্ছে আমার বৃষ্টির সময় বারান্দায় বসে থাকাটা। কেন ভালো লাগে সেটা আমি জানি না। কিছুক্ষণ পর আমি আমার রুমে গেলাম। রুমের জানালা দিয়ে বাইরের আকাশের দিকে তাকালাম। যদিও কিছু দেখা যাচ্ছে না তবুও কাল্পনিক আর বাস্তবতার সংমিশ্রণে একটা খুব সুন্দর ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের উঠোনে অনেক গোলাপ ফুলের গাছ আছে সেখানে ফুল ফুটেছে। অনেক পাহারা দিয়ে রাখতে হয় এলাকার ছেলেপুলেদের জন্য। না বলে সুন্দর ভাবে তারা ছিঁড়ে নিয়ে যায়। ফুলগুলোর ওপর বৃষ্টির পানি পড়ছে আর ফুলগুলোর গন্ধ যেন চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। সুন্দর, অমায়িক, লাবণ্যময়ী সুঘ্রাণ। 

আমাদের বাসার ঠিক পেছনেই আম বাগান এবং আম বাগানের পাশে ঘন লতাপাতার ঝোপ-ঝাড়। ঝোপঝাড়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে কেমন একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আমার কাছে তাই মনে হয়। বেশ ভালো লাগে এটা আমার কাছে। কিছুক্ষণ পর বাতাস বইতে শুরু করেছে। আমার মা অন্য রুমে শব্দ করে সূরা ফাতিহা পড়ছেন। ঠিক তখন হঠাৎ ভাবীর চিৎকার শোনা গেল। আমরা সবাই ছোটাছুটি করে ভাবীর রুমের দিকে দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ভাবী বিছানায় শুয়ে প্রচন্ড কান্না করছেন আর ব্যাথা ব্যাথা বলে চিল্লাচিল্লি করছেন। মা তাড়াতাড়ি গিয়ে ভাবীকে ধরলেন। আমি কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভাবীর চিৎকার দেখে আমার কান্না চলে আসছে। আমার আপন কোন বোন নাই তো তাই ভাবীকে আপন বোন ছাড়া কখনো অন্য কিছু ভাবিনাই। আর এই কারনেই বোনের কষ্ট দেখে আমার অটোমেটিক কান্না চলে এসেছে। বাবা আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন " কান্নাকাটি করিস না কিছু একটা করতে হবে। "

বাবা আমার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলেন। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। রিকশা বা ভ্যান ওয়ালা কাউকেই পাবোনা। 

সজল মিয়া আমাদের এলাকার ড্রাইভার তার একটা রিকশা আছে। ফোন দিলাম তার নাম্বারে। ফোন বন্ধ। কী করবো বুঝতেছিনা কিছুই। ওদিকে ভাবীর কান্না শুনে শুনে মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছে। লাইটটা আর ছাতাটা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়ে গেলাম। বাবা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। থম থমে কালো রাত। চারপাশে অন্ধকার। ভূতের ভয় আমার মধ্যে প্রচন্ড রকম ভাবে আছে কিন্তু এ মূহুর্তে এসব ভাববার সময় নাই। সজল মিয়ার বাড়ি গিয়ে দেখি আরেক কান্ড। কী করবো কিছুই বুঝলাম না। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।


চলবে.......

ধূসররঙ

পর্ব - ০১)

Post a Comment

Previous Post Next Post