(তোকে_অনেক_ভালোবাসি)
love you so much
![]() |
সকালে আদ্র অফিসে যাওয়ার আগে আমি উনার সাথে কোনো কথা বলিনি। উনি বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আমিই এড়িয়ে গিয়েছি। কথা বলিনি বলে উনি রেগে না খেয়েই বেড়িয়ে গেছে। এখন আমার নিজেরই খারাপ লাগছে না খেয়ে গিয়েছে বলে। বাইরে গিয়ে কিছু খেয়েছে কি না সেটাও জানি না। আচ্ছা আমি কি একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবো খেয়েছে কিনা?
হ্যা ফোন দিয়েই দেখি। আদ্রকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিতেই ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে আদ্রর নামটা ভেসে উঠেছে। যাক ভালোই হলো আমি ফোন দেওয়ার আগে উনি নিজেই দিয়েছে।
ফোন রিসিভ করতে ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো
____খেয়েছো তুমি?
আমার কিছুটা হাসি পেলো উনার কথা শুনে,আমিও গম্ভীর ভাবে বললাম
____হুম খেয়েছি এখন আর কারো বলার আশায় বসে থাকি না।
যদিও এখনো খাইনি আমি ইচ্ছে করেই বললাম যে খেয়েছি। আদ্র বললো
____মিথ্যা না বলে যাও খেয়ে নাও। আমি জানি তুমি খাওনি এখনো।
____আমি....
____চুপ আর একটা কথাও নয় তুমি এখুনি খেতে যাবে বুঝেছো?
এই লোকটা বুঝলো কি করে আমি না খেয়ে মিথ্যা বলেছি! সকালে নিজে খেয়ে গেলে তো আমাকে না খেয়ে থাকতে হতো না। রাগ দেখিয়ে চলে গেলো এখন আবার খাওয়ার জন্য ধমকাচ্ছে।
____কি হলো কি বলেছি শুনতে পাও নি তুমি?
____জ্বি শুনেছি আমি কানে শুনতে পাই এতো জোরে না বললেও চলবে। যাই হোক তুমি খেয়েছো?
____না,খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি। তুমি খেয়ে নাও আমিও খাচ্ছি।
আহা কতো দরদ । বাইরে গিয়ে খাবার সামনে নিয়ে আমাকে খাওয়ার জন্য বলছে। কাল রাতেও যে আমি না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন কোথায় ছিলো এতো দরদ। এখন আসছে ধমকে খাওয়াতে হুহ।
.
বিকেলে ব্যালকনিতে বসে ম্যাগাজিন বই পড়ছিলাম এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। এখন আবার কে এলো? বইটা রেখে নিচে এসে দরজা খুলতে দেখলাম একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটি আদ্রর বয়সী হবে দেখতেও বেশ ভালোই। আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম
____আপনি কে কাকে চাচ্ছেন?
ছেলেটি মৃদু হেসে বললো
____আমি আপনার কাছে এসেছি,আপনি আরিশা রাইট?
____হ্যা আমিই আরিশা। আপনি আমার কাছে কেনো এসেছেন? আমি তো আগে কখনো আপনাকে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
____হুম ঠিক বলেছেন আগে আমাদের দেখা হয়নি। আচ্ছা আমি কি ভেতরে এসে বসতে পারি,আসলে আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।
আমি ছেলেটিকে ভালোভাবে দেখে নিলাম। অচেনা একটা ছেলে তাকে কি ভেতরে নিয়ে বসতে দেওয়াটা ঠিক হবে? তারপরে বাড়িও ফাকা।
____আপনি হয়তো আমাকে ভেতরে যেতে দিতে চাইছেন না। ইট'স ওকে,আমি এখানে দাড়িয়েই বলছি।
____ভেতরে আসুন আপনি।
ছেলেটি হালকা হেসে ভেতরে ঢুকলো। আমি মেইন দরজাটা খোলা রেখেই ছেলেটিকে বসতে বললাম। আমিও সামনের সোফায় বসে বললাম
____ভাইয়া কে আপনি, আর আমাকে কি করে চিনেন?
____আমার নাম শুনলে হয়তো আপনি চমকে যাবেন, আমি রিশাত রায়হান। আর আপনাকে আমি চিনতাম না নিজের প্রয়োজনে চিনতে হয়েছে।
আমি হা করে তাকিয়ে আছি ছেলেটির দিকে। এই সে রিশাত রায়হায়! কিন্তু আমাকে কি প্রয়োজন তার?
আমি বললাম
____গতকাল সে ভিডিও মেসেজ আপনিই দিয়েছিলেন?
____হ্যা আমিই দিয়েছিলাম ওগুলো আপনাকে। আসলে কি বলুন তো আমি চাইছি না আপনার সংসারটা ভেঙে যাক। আপনার বয়সী আমারো একটা বোন আছে আপনিও আমার বোনের মতোই তাই সবটা জেনে চুপ থাকতে পারলাম না। ভেবেছিলাম কাল যেটুকু বলেছি এর থেকে আর বেশি কিছু বলবো না। কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই আপনাকে সাবধান করতে এসেছি কারন আমি চাই আপনার এবং আদ্রর ভালোবাসাটা বেচে থাকুক।
আমি বিষ্ময় চোখে রিশাত নামের ছেলেটিকে বললাম
____দেখুন আমি আপনার কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ।তাছাড়া আপনি হঠাৎ আমার সংসার ভাঙার কথা কেনো বলছেন?
____সংসার ভাঙার কথা বলছি কারন কেউ একজন চাইছে আপনার থেকে আদ্রকে আলাদা করতে। সে চায় না আদ্র আপনাকে নিয়ে ভালো থাকুন।
____মানে! কি বলছেন আপনি কে সে?
____রাফিয়া।
আমি অবাক হয়ে বললাম
____রাফিয়া!! কিন্তু রাফিয়া তো আদ্রর ভালো একজন বন্ধু।
রিশাত জোরে হেসে উঠে বললো
____বন্ধু হাহ! ওটা তো শুধু লোক দেখানো। হ্যা আদ্র ওকে বন্ধু ভেবেই ওর পাশে থাকে ওকে সময় দেয় ঠিকি কিন্তু রাফিয়া ও সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। রাফিয়া আদ্রকে ভালোবাসে তাই যে কোনো মূল্যেই হোক ও আদ্রকে নিজের কাছে রাখতে চাইছে। আর এই কাছে রাখার জন্য রাফিয়া নিজের ব্রেইন ক্যান্সারের মিথ্যে নাটক সাজিয়েছে। রাফিয়া একদম সুস্থ ওর কিছুই হয়নি ও শুধুৃমাত্র আদ্রকে পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন আদ্রকে অসুস্থতার কথা বলে ঠকাচ্ছে। আর আদ্র সেও কেনো যাচাই না করে রাফিয়ার বানানো কথাগুলোকেই বিশ্বাস করছে।
আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। একটা মেয়ে কি করে এরকম একটা ব্যাপার নিয়ে মিথ্যে বলতে পারে! তার মনে কি আল্লাহকে নিয়ে কোনো ভয় নেই! মিথ্যা বলা যে মহাপাপ সেটা কি সে জানে না! রাফিয়া একটা মেয়ে হয়ে কি করে এতোটা খারাপ হতে পারে।
____কি হলো আরিশা আপনি কিছু বলছেন না যে। আমার কথাগুলো কি আপনার বিশ্বাস হয়নি? দেখুন আমি যা যা বলছি সবই সত্যি। আমি কাল পর্যন্ত আদ্র এবং রাফিয়া দুজনকেই সন্দেহ করতাম। কিন্তু পরে যখন সবটা ভালো ভাবে জানতে পারলাম তখন বুঝেছি রাফিয়া আদ্রকে যা বলছে সে তাই শুনছে শুধুমাত্র রাফিয়ার ব্রেইন ক্যান্সারের কথা ভেবে।
আমি রিশাতকে বললাম
____আমিও এমন কিছুই সন্দেহ করেছিলাম বাট এটা নিয়ে এতোটা ভাবিনি কখনো। তবে হ্যা আপনার কথাগুলো আমি অবিশ্বাস করছি না। কিন্তু আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না এতে আপনার কি স্বার্থ আছে,আমাকেই বা কেনো সবটা বলে সাবধান করছেন?
____আমার স্বার্থটা হলো ভালোবাসার। আমি রাফিয়াকে ভালোবাসি অনেক আগে থেকে রাফিয়াও আমার ভালোবাসাকে এক্সেপ্টও করেছিলো। বাট হুট করে ওর কি হলো জানিনা,একদিন আমাকে বললো আমার সাথে নাকি রিলেশন রাখবে না। আমি কারন জানতে চাইলে ও বলেছিলো ও আমাকে নয় আদ্রকে ভালোবাসে।
রাফিয়াকে অনেক বুঝিয়েছি ও বোঝেনি আমাকে। তারপর ওকে ফলো করে আদ্রর খোজ নিয়ে জানতে পারলাম সে আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। আর রাফিয়া তা সহ্য করতে পারছে না এইজন্যই এমন একটা প্ল্যান করেছে আপনাদেরকে আলাদা করার।
রিশাতের দিকে তাকিয়ে আমার মায়া লাগছে,উনার কথাগুলো যে একটাও মিথ্যে নয় তা উনার চোখের কোনে জমে থাকা পানি দেখেই বুঝতে পারছি। রাফিয়া এমন একটা ছেলেকে কি করে পারলো ঠকাতে। একজনকে কষ্ট দিয়ে এখন আবার আমার আদ্রর পেছনে পড়েছে শাঁকচুন্নিটা।
.
সন্ধার আগেই আজ আদ্র বাড়িতে ফিরেছে। আমি মনে মনে খুশি হয়েছি ঠিকি কিন্তু আদ্রকে বুঝতে দিচ্ছি না।
রাতে মা ফোন দিয়ে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আদ্রকে দিতে বললো। আদ্রর হাতে ফোন দিলে উনি কথা বলতে বলতে ব্যালকনিতে গেলো। তখনি আদ্রর ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে রাফিয়া নামটা দেখেই আমার রাগ উঠে গেলো। ইচ্ছে করছে ওই পেত্নীটার চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে দেই।
আমি ফোন কেঁটে দিয়ে অফ করে দিলাম। এবার ওই রাফিয়া মিথ্যেবাদীটা ফোন দিয়ে বন্ধ পাবে হু।
ওদিকে রাফিয়া আদ্রর নাম্বারে বারবার ফোন দিয়ে অফ পাচ্ছে। রাগে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। আদ্রকে ফোনে না পেয়ে নিজের ফোনটা দেয়ালে ছুড়ে মারলো।
রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো
____আদ্র তুমি আমার ফোন কেটে দিয়ে অফ করে অনেক বড় ভুল করলে। তুমি নিশ্চয় এখন ওই আরিশার সাথে হাসি খুশিতে মেতে আছো। কিন্তু আমি পারছি না তোমাদেরকে একসাথে দেখতে জাস্ট সহ্য করতে পারছি না। আমিও চাই তোমাকে নিয়ে থাকতে,তোমাকে ভালোবাসতে আর.....। কিন্তু ওই মেয়েটা সব শেষ করে দিলো কেড়ে নিয়েছে ও তোমাকে।
____কি হয়েছে আপু! কার সাথে কথা বলছো তুমি?এখানে তো কেউ নেই!
রাফিয়ার ছোট বোন রাইমা দরজায় দাড়িয়ে কথাটা বললো। রাফিয়া রাইমার দিকে তাকিয়ে বললো
____নিজের সাথে নিজেই কথা বলছি আমি,রাইমা তুই রুমে যা একা থাকতে দে আমাকে।
____হুম যাচ্ছি। রিশাত ভাইয়া এসেছে তাই তোমাকে বলতে এসেছিলাম।
____রিশাত এসেছে! কিন্তু কেনো?
____আমি কি করে জানবো কেনো এসেছে,গিয়ে জিজ্ঞেস করো।
রাইমা চলে গেলো। রাফিয়ার রাগটা আরো বেড়ে গিয়েছে রিশাত এসেছে শুনে। ও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো রিশাত বসে আছে। রিশাত রাফিয়াকে দেখে শুকনো হাসি দিয়ে বললো
____কেমন আছো রাফিয়া?
____আমি কেমন আছি তা তোমার না জানলেও চলবে। এই রাতে কি জন্য এসেছো তুমি?
____তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই....
____ও আচ্ছা দেখতে এসেছিলে। দেখা তো হয়েছে এখন তুমি আসতে পারো।
রিশাত এগিয়ে এসে রাফিয়ার হাত ধরে বললো
____প্লিজ রাফিয়া আমাকে দূরে ঠেলে দিও না আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি পারবো না তোমাকে ছেড়ে থাকতে।
রাফিয়া এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে বললো
____সাট আপ রিশাত। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না,তোমাকে আমি আগেই বলেছি আমি আদ্রকে ভালোবাসি তোমাকে নয়। চলে যাও তুমি।
____তুমি যদি আদ্রকেই ভালোবাসতে তাহলে আমার সাথে কেনো রিলেশনে জড়িয়ে ছিলে? আমার ইমোশন নিয়ে কেনো খেললে তুমি?
____তোমাকে তখন ভালোলেগেছিলো এখন তোমাকে ভালোলাগে না ব্যাস। আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না তোমার সাথে।
রাফিয়া চলে যেতে নিলে রিশাত ওর হাত ধরে বললো
____রাফিয়া এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নাও তোমার ব্রেইন ক্যান্সারের এই মিথ্যে অভিনয়টা বন্ধ করো। উপরে আল্লাহ আছেন সে সব দেখছেন তাকে ভয় করো।
রাফিয়া হাত ছাড়িয়ে বললো
____ওও তাহলে তুমি জেনেই গিয়েছো ব্রেইন ক্যান্সারের ব্যাপারটা মিথ্যে!
____হ্যা আমি জানি সবটা তোমার সাজানো। রাফিয়া প্লিজ বাদ দাও সবকিছু। আদ্রকে ওর লাইফ নিয়ে থাকতে দাও। আমি তোমাকে অনেক ভালো রাখবো।
____কিহ! ভালো রাখবে তুমি আমাকে! কি দিয়ে ভালো রাখবে,কি আছে তোমার? আদ্রর মতো বড় বড় বিজনেস আছে তোমার?
রিশাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাফিয়ার দিকে। রিশাত বেশ বুঝতে পারছে রাফিয়ার মনে কি আছে। রিশাত ছলছল চোখে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো
____লোভ বড্ড খারাপ রাফিয়া।এর থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভালো। একদিন তুমি বুঝবে কতো বড় ভুল করেছো তুমি। একটা কথা মনে রেখো অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখি হওয়া যায় না।
রিশাত বেড়িয়ে গেলো রাফিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ঘুরে দাড়াতে রাইমা এসে ওর সামনে দাড়ালো।
রাফিয়া বললো
____কিছু বলবি?
____আপু রিশাত ভাইয়া কিন্তু সত্যি তোমাকে ভালোবাসে। তুমি সবটা জেনে শুনেও আদ্র ভাইয়া আরিশা আর রিশাত ভাইয়ার লাইফ নিয়ে খেলছো। এমনকি নিজেকে অসুস্থ বলে আরো বড় ভুল করছো তুমি। আপু তুমি আদ্র ভাইয়াকে সত্যিটা বলে রিশাত ভাইয়াকে আপন করে নাও। তাতে আমরা সবাই ভালো থাকবো।
____এই তুই চুপ করতো একদম জ্ঞান দিবি না আমাকে।
.
আদ্র ঘুমিয়ে পড়ার পরে আমি ব্যালকনিতে গিয়ে রিশাতকে ফোন দিলাম। দুইবার রিং হতে ওপাশ থেকে রিসিভ হলো। রিসিভ করতেই বললাম
____কি ব্যাপার ভাইয়া আপনি তো কোনো প্রুভ দিলেন না। আর প্রুভ ছাড়া আদ্রকে কিছু বললে হয়তো বিশ্বাস করবে না তাই কিছু বলিনি এখনো।
রিশাত বললো
____তুমি আদ্রকে আগে বুঝিয়ে বলো,ও বিশ্বাস না করলে পরে দেখবো।
আমি আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলাম। রিশাতের কন্ঠটা শুনে মনে হলো উনার মন খারাপ হয়তো রাফিয়ার জন্যই।